RMG ডাইরি

ব্লগ লিখে ছড়িয়ে দিন আপনার চিন্তাধারা গড়ে তুলুন সমৃদ্ধ একটি ডকুমেন্টস লাইব্রেরী উৎসাহিত করুন প্রশিক্ষণে চাকরীর বিজ্ঞাপন দিন একদম ফ্রিতে …

টি শার্ট তৈরির কারখানা – আধুনিক যুগের খুব জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। আপনি হতে পারেন বাংলাদেশ এমনকি সারা বিশ্বের জনপ্রিয় এই টি শার্ট ব্যবসার একজন সম্মানীয় অংশিদার। আপনি যদি বেকার হয়ে থাকেন বা সদ্য লেখাপড়া শেষ করে কোন কিছু করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে টি শার্ট তৈরির কারখানা, ব্যবসাটি নিয়ে ভাবতে পারেন।

নিজের জন্য যে কোন ব্যবসা নতুনভাবে শুরুর আগে আপনার ঐ ব্যবসা সম্পর্কে একটি ধারনা নেওয়া প্রয়োজন। সেই ধারনা লাভের সবচেয়ে উত্তম উপায় হল যদি আপনি কোন টি শার্ট তৈরির কারখানায় নিজে সরাসরি কাজ করতে পারেন। এর ফলে আপনার এই ব্যবসার অনেক খুটিনাটি সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তার পক্ষেই নিজে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ থাকেনা। এমনও হতে পারে, ঐসব ছোট পদে আপনি কাজ করার আগ্রহি হবেন না।

অপরদিকে, কোন গার্মেন্টস ফেক্টরিতে উপরের পদগুলিতে অভিজ্ঞতা ছাড়া ঢুকাও যায়না। সাধারনত: ছোট পদ থেকেই উপরের পদে যেতে হয়। যেমন ধরুন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সিনিয়র পর্যায়ের কিছু পদ সুপারভাইজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার; এই সব পদে যারা কাজ করে থাকেন তাদের পক্ষে নিজে ফ্যাক্টরি দিয়ে টি শার্ট তৈরির ব্যবসা শুরু করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এটা বেশীরভাগ নতুন উদ্যোক্তার পক্ষে পরিবেশ-পরিস্থিতির বিচারে সম্ভব হয়ে উঠেনা।

তাই, চলুন এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক আপনার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছারাই কিভাবে আপনিও হতে পারেন এই সেক্টরের একজন ভবিষ্যত সফল উদ্যোক্তা। তার আগে, জেনে রাখতে পারেন টি-শার্ট কত প্রকার ও কি কি – যা অন্য একটি পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে।

 টি শার্ট ব্যবসার বাজার সম্ভাবনা কেমন?

টি শার্টের বাজার সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশে এর বাজার সম্ভাবনা প্রচুর। বাংলাদেশের তরুন সমাজের সংখ্যা কিন্তু একবারেই কম নয়। ধরুন এদেশের সর্বমোট জনসংখ্যার পরিমান বর্তমানে প্রায় ১৭ (সতের) কোটি। এর প্রায় অর্ধেক হল পুরুষ। আবার পুরুষ জনসংখ্যার মধ্যে ১০ থেকে ৫০ বয়সের সর্বমোট পুরুষের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৫ (পাঁচ) কোটি।অর্থাৎ বাংলাদেশের টি শার্ট মার্কেটে আপনার সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্য ধরে নিতে পারেন প্রায় ৫ (পাঁচ) কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠি যদি বছরে কমপক্ষে  দুটি করেও টি শার্ট ক্রয় করে তাহলে সারা বছরে টি শার্ট বিক্রির সংখ্যা হবে 10 (দশ) কোটি। এই 10 (দশ) কোটি টি শার্টের মধ্যে  প্রতিটির মুল্য গড়ে যদি একশত টাকা করেও হয় তাহলে বাংলাদেশে টি শার্ট মার্কেটের সাইজ হবে ১০০০ কোটি টাকা। এই সহজ হিসাবের দ্বারাই বুঝে নেওয়া যায় যে, আমাদের দেশে টি শার্ট ব্যবসার সম্ভাবনা কেমন হতে পারে। এখন, হিসাব করুন, এই টোটাল মার্কেট ভলিউমের মধ্যে আপনি আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে কত পার্সেন্ট মার্কেট শেয়ার ক্যাপচার করতে চান।

আপনার টি শার্ট ব্যবসা পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত?

যেকোন ব্যবসা শুরু করা সহজ হলেও প্রতিযোগীতার বাজারে টিকে থাকা এতটা সহজ নয়। এর জন্য পয়োজন আপনার সুদুরপ্রসারি এবং বাস্তবসম্মত বিজিনেস প্ল্যান বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। আপনার পরিকল্পনা করা চাই কমপক্ষে আগামি পাঁচ বছরকে সামনে নিয়ে। এই মেয়াদের মধ্যে আপনার পরিকল্পনা বছরভিত্তিক করে নিতে হবে। ধরে নেই, আপনি টি শার্ট ব্যবসার জগতে একেবারেই নতুন, এই বিষয়ে আপনার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা সম্ভব হয়নি। আপনি সদ্য লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে উল্টো চাকুরির সুযোগ তৈরির জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেছেন। ব্যবসার শুরুতে আপনার মুলধনের পরিমানও খুব সীমিত। তাহলে এই পরিস্থিতিতে আপনি ব্যবসা শুরু করতে গেলে আগামি পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রতিযোগীতার বাজারে কিভাবে টিকে থাকবেন। তাহলে আসুন ধাপে ধাপে জেনে নেই কি হতে পারে আপনার ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি।

ব্যবসা শুরুর প্রথম দুই বছরের পরিকল্পনা:

প্রথম ধাপ: আপনি আপনার বাড়ির আশে পাশে ছোট সাইজের এমন একটি টেইলর সপ ভাড়া নেওয়ার জন্য খোজ করতে পারেন যেখানে পজিশন বাবদ অগ্রিম টাকা ও দোকানের মাসিক ভাড়ার পরিমান আপনার সাধ্যের ভিতর থাকে।

দ্বিতীয় ধাপ: আপনার অবসর সময়ে টি শার্ট ব্যবসা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা শুরু করুন। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে কোন শিক্ষিত যুবকের পক্ষে যেকোন বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন কিছু নয়। আপনি এই বিষয়ে গুগল এবং ইউটিউবে সার্চের মাধ্যমে প্রয়োজনী তথ্য পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। বিশেষ করে ইউটিউবের ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে আপনি সহজেই উপকৃত হতে পারেন। এর পাশাপাশি টেইলরিং, ফ্যাশন ডিজাইন বা গার্মেন্টস বিষয়ে আপনি একটি শর্ট কোর্স করে নিতে পারেন।

তৃতীয় ধাপ: প্রশিক্ষণ এবং অনলাইন রিসোর্স থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নেওয়া হয়ে গেলে এবারে আপনি প্রথম ধাপ মোতাবেক দোকানটি ভাড়া নিয়ে চালু করতে পারেন। তারপর একজন দক্ষ শ্রমিক ফুল টাইমের পরিবর্তে কনট্রাক্ট বেসিসে নিয়োগ করুন যার কাপড় কাটা এবং সেলাই উভয় লাইনেই অভিজ্ঞতা থাকে। প্রথম প্রথম দোকানের ভাড়া পরিশোধে যাতে পকেটের উপর চাপ না হয় এর জন্য আপনি পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড এবং বিকাশ-রকেটের এজেন্সি চালিয়ে যেতে পারেন।

চতুর্থ ধাপ: এবারে টেইলর সপের জন্য প্রয়োজনিয় যন্ত্রপাতি এবং এক্সেসরিজ ক্রয় করুন। যন্ত্রপাতির মধ্যে এমন ধরনের সেলাই মেশিন অন্তর্ভূক্ত করুন যা দ্বারা টেইলর সপ পরিচালনা করা যায় এবং একই সাথে টি শার্টও সেলাই করা যায়। এই যন্ত্রপাতির তালিকায় আপনি দুটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিন (একটি নতুন আর একটি পুরাতন), একটি ওভার লক মেশিন এবং একটি ফ্যাট লক মেশিন রাখতে পারেন। এর পর, প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ যেমন কেচি, স্কেল, সুতা ইত্যাদি মজুদ রাখুন। তারপর টেইলর সপের জন্য কমন কিছু থান কাপড় মজুদ রাখুন।

পঞ্চম ধাপ: উপরের ধাপগুলি সম্পন্ন হয়ে গেলে, এবারে আপনি আপনার টেইলর সপের মার্কেটিং শুরু করে দিন। এক্ষেত্রে আপনি ইন্টারনেট মার্কেটিং পদ্ধতিও অবলম্বন করতে পারে। যেমন, ফেসবুক মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং, গুগল মাই বিজিনেজ পেজ ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। এছাড়াও প্রথম প্রথম আপনার পরিচিত মানুষজন এবং আত্মিয়-স্বজনদের থেকে অর্ডার কালেকশনের চেষ্টা করুন।

 

ষষ্ঠ ধাপ: টি শার্টের কিছু নমুনা ফেব্রিকস যোগার করুন এবং ট্রায়াল বেসিসে উৎপাদন করা শুরু করুন। এক্ষেত্রে প্রথমে কয়েকটি মিনি গার্মেন্টস ফেক্টরি ভিজিট করুন। তারা যদি আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে না চায় তাহলে তাদের কোন একটি মিনি গার্মেন্টস ফেক্টরি সিলেক্ট করে তাদের দিয়েই প্রথম ট্রায়াল অর্ডারটি সেরে ফেলুন। পাশাপাশি যে দক্ষ শ্রমিকের সাথে আপনার চুক্তি রয়েছে তার কাছ থেকে টি শার্ট তৈরির ধাপগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জেনে রাখুন। তারপর, আপনি ক্রস চেক করে মিলিয়ে দেখুন যে ঐ মিনি গার্মেন্টস যাকে ট্রায়াল অর্ডারটি দিয়েছেন তার টি শার্ট তৈরির কৌশলের সাথে আপনার চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিকের কথা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ। টি শার্ট বানানোর পরের কয়েকটি চালান আপনার নিজস্ব শ্রমিকের মাধ্যমেই করিয়ে নিন এবং নিজে নিজে চর্চা করে তা রপ্ত করুন। এভাবে কয়েকটি ট্রায়াল চালান হাতে কলমে দেখার পর আপনার গ্যাপটুকু পূর্ণ হয়ে যাবে। এভাবেই, আস্তে আস্তে আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হতে থাকবে।

 

সপ্তম ধাপ: আপনার টি শার্টের ট্রায়াল প্রোডাক্ট তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো বাজারজাত করনের পন্থা ঠিক করুন। মনে রাখবেন, ট্রায়াল প্রোডাক্ট হিসাবে তৈরি হওয়া পন্য যাতে অবশ্যই মান সম্পন্ন হয়। ব্যবসার প্রথমে লাভের কথা ভাবা যাবেনা। আপনার মার্কেট ধরতে এবং বুঝতেই সময় পার হয়ে যাবে। টি শার্টের কয়েকটি নমুনা আপনার চারপাশের কয়েকটি দোকানে সরবরাহ করুন এবং লাভ যথেষ্ট সীমিত রেখে অর্ডার নেওয়া শুরু করুন। বড় বড় শপিং সেন্টারে গিয়েও যোগাযোগ করুন এবং দেখুন সেখানে কি ধরণে টি শার্ট কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আপনার তৈরিকৃত টি শার্টের সাথে ঐসব শপিং সেন্টারের টি শার্টের একটি তুলনামুলক স্টাডি করে পরবর্তিতে তাদের মত করে বানানোর শর্তে অর্ডার নেওয়ার চেষ্টা করুন। এভাবে আস্তে আস্তে দুই বছর অতিবাহিত করুন। এর ফলে আপনি প্রথম দুই বছরে নূন্যতম ইনভেস্টমেন্টে আপনি এই সেক্টরের ব্যবসা সম্পর্কে যথেস্ট ধারনা সঞ্চয় করতে পারবেন।

টি শার্ট ব্যবসা শুরুর পরের তিন বছর: 

একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রায় প্রথম দুই বছর সময়টিই হলো নতুন যেকোন ব্যবসার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়। আপনি যদি সফলভাবে এই সময় অতিবাহিত করতে পারেন তাহলে পরের সময়গুলো আপনার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। কারণ, প্রথমে ছিলেন আপনি একেবারেই অনভিজ্ঞ। আর এখন আপনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ব্যবসার এই পর্যায়ে আপনি বেশী মুলধন বিনিয়োগ করতে পারেন। কারন, আপনি ইতিমধ্যেই টি শার্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চ করেছেন।

টি শার্ট তৈরিতে কি ধরনের ফেব্রিকস ব্যবহৃত হয়?

টি শার্ট কোন ধরনের ফেব্রিকস দিয়ে তৈরি করা হয় বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকেরই জেনে রাখা দরকার। টি শার্টে বিভিন্ন রকমের ফেব্রিকস ব্যবহার করা হয়। ফেব্রিকস প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে নীট এবং উভেন ফেব্রিকসের বিষয়ে। টি শার্টের বেলায় বহুল ব্যবহৃত ফেব্রিকস হল নীট ফেব্রিকস। টি শার্ট সাধারনত: কটন ইয়ার্ন থেকে তৈরি হয়। এর মধ্যে কিছু কিছু টি শার্টে একশত ভাগ কটন থাকে আবার কিছু কিছুতে কটনের সাথে পলিষ্টার মিক্সড থাকে। যাহোক, এবার চলে আসি নীট ফেব্রিকসের মধ্যে কোন কোন ফেব্রিকস অধিকাংশ ক্ষেত্রে টি শার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

  • সিঙ্গল জার্সি
  • ডাবল জার্সি
  • ১x1 রীব ফেব্রিকস
  • ২x২

রীবস আবার গলার অংশ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।

ফাইবার কনটেন্ট এর উপর ভিত্তি করে নিম্নোক্ত ধরনের ফেব্রিকস ব্যবহার করা হয়:

  • একশত ভাগ খাটি কটন
  • মোডাল ফেব্রিকস
  • লিকরা ফেব্রিকস

টি শার্ট তৈরির ফেব্রিকস কোথায় পাবেন?

টি শার্ট তৈরির ফেব্রিকস আপনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেটেই পেতে পারেন। তবে, ইনটেক্ট ফেব্রিকস পেতে হলে পুরান ঢাকার ইসলামপুর, মায়া কাটরা, সদরঘাট থেকে আহসান মঞ্জিল রোডে অনেক দোকান রয়েছে যারা পাইকারি দরে ফেব্রিকস বিক্রি করে থাকে। আবার কম দামে পেতে হলে, মিরপুর ১০ নম্বরের ঝুট পট্টিতেও খোজ করতে পারেন। যদি আপনি বাল্ক কোয়ান্টিটি ফেব্রিকস যোগার করতে চান তাহলে নারায়নগঞ্জ এবং নরসিংদির বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল থেকে লট হিসাবে গ্রে কাপড় ক্রয় করতে পারেন। তারপর, কোন ডাইং ফেক্টরি থেকে আপনার পছন্দের রং নির্বাচন করে সলিড কালারে ডাইং করিয়ে নিয়ে টি শার্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আবার, অনেক সময় এই ধরনের ফেব্রিকসও স্টকলট হিসাবে ডাইং ফেক্টরিতে যোগযোগ করলে পাওয়া যেতে পারে যেখানে আপনার খরচ আরোও কমে যাবে।

একটি টি শার্ট তৈরির কারখানায় কি কি যন্ত্রপাতি এবং এক্সেসরিজ প্রয়োজন?

আজকের গার্মেন্টস সেক্টরে যারা বড় বড় উদ্যোক্তা তাদের অনেকেই প্রথমে ছোট থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। কাজেই, ধরে নেই, সেক্ষেত্রে আপনিও ছোট থেকে যাত্রা শুরু করবেন। বড় বড় গার্মেন্টস ফেক্টরির মালিকগন সরাসরি চায়না, সিঙ্গাপুর থেকে এলসি করে নতুন সেলাই মেশিন আমদানি করে। কিন্তু ছোট খাট উদ্যোক্তার জন্য টি-শার্ট তৈরির কারখানা চালু করার জন্য আপনি মিরপুর-১ নম্বরে মিসকো সুপার মার্কেট খেবে সেলাই মেশিন ক্রয় করতে পারেন। এখানে আপনি নতুন, পুরাতন উভয় প্রকারের সেলাই মেশিনই পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশে গার্মেন্টস ফেক্টরির জন্য সাধারনত: জ্যাক, জুকি এবং ব্রাদার ব্র্যান্ডের সেলাই মেশিন বেশী চলে। এই সব ব্র্যান্ডের সেলাই মেশিনগুলো টেকসই হয়। যাহোক, প্রথম অবস্থায় আপনি নতুন-পুরাতন মিলে চার থেকে পাঁচটি সেলাই মেশিন দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন। আবার যদি কখনোও কাজের লোড বেড়ে যায় তখন এই মিসকো সুপারমার্কেট থেকেই আপনি মেশিন ভাড়া নিয়ে আপনার প্রোডাকশন টার্গেট ফুলফিল করে নিতে পারেন। তবে, টি শার্ট তৈরির কারখানা স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে আপনি নিচের যন্ত্রপাতি ও এক্সেসরিজ ক্রয় করতে পারেন-

  • সিঙ্গল নিডল সেলাই মেশিন- ২ টি;
  • ডাবল নিডল সেলাই মেশিন – ২ টি
  • ওভারলক মেশিন – ১ টি
  • ফ্যাটলক মেশিন – ১ টি
  • কাপড় কাটার মেশিন-১ টি
  • আয়রন-১ টি
  • অন্যান আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র যেমন প্রিন্টিং মেশিন, ফেব্রিক, রঙ ইত্যাদি।

প্যাটার্ন কাকে বলে, গার্মেন্টস প্যাটার্ন  কত প্রকার, কিভাবে তৈরি করতে হয়- বিষয়গুলো নিয়েই আজাকের এই পোষ্ট। গার্মেন্টস পন্য  বা পোশাক তৈরি করার সময় বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ধাপটি হল ফিটিং। অর্থাৎ তৈরি পোশাকটি গায়ে ঠিক মত লাগল কিনা নাকি ছোট-বড় হল, বা বেশী টাইট বা বেশী ঢিলা হয়ে গেল! এটিকেই আমরা ফিটিং হিসাবে জেনে থাকি।

শরিরের সাথে ফিট হওয়া- বিষয়টি এত গুরত্বপূর্ণ যে এর উপর নির্ভর করছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাচের উৎপাদিত সমস্ত পোশাক বায়ারের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না বাতিল হবে। যদি বাতিল হয়ে যায় তাহলে ব্যাচটির পুরো লটই বাতিল হয়ে গেল। অথচ লটের সমস্ত পোশাক তৈরিতে কি পরিমান মেহনত, শ্রমিকের মুজুরি ও গার্মেন্টস মালিকের অর্থ বিনিয়োগ জড়িত ছিল।

তাহলে, আমরা ধারণা পেলাম ফিটিং হল গার্মেন্টস পণ্যে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা পোশাক তৈরির শুরুতেই ধাপটি সেরে নিতে হয়। তাহলে, ফিটিং এর বিষয়টি কিভাবে সেরে নিবেন?

শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে – পোশাক প্রস্তুতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরপর কয়েকটি অনুসরণ করতে হয়। প্রধান ধাপগুলি হল প্রথমে কাপড় কেটে নেওয়া, তারপর সেলাই করা এবং সবশেষে ফিনিশিং করে বাজারে ছেড়ে দেওয়া।

আমরা জানি গার্মেন্টসে এক একটি লটে হাজার হাজার পিস পোশাক থাকে। প্রশ্ন হল, এত শত-সহশ্র পোশাকের জন্য কাপড় কি হিসাবে কাটবেন? কোন মাপে কাটবেন?

এর উত্তর হল গার্মেন্টস প্যাটার্ন। এই প্যাটার্নের মাপ অনুযায়ি কাপড়গুলো কেটে নিতে হবে। তার মানে, পোশাক কাটার আগেই প্যাটার্ন তৈরি করতে হবে।

কোন তৈরি পোশাক শরিরে ফিট হওয়ার জন্য প্রথমেই টার্গেট কাস্টমারের শরীরের মাপ অনুযায়ি সঠিকভাবে প্যাটার্ন তৈরি করতে হবে যাতে পোশাকগুলির ফিটিং নিয়ে কোন ত্রুটি না থাকে বা লট বাতিলের সম্ভাবনা না থাকে।

তাহলে, উপরের আলোচনা থেকে আমরা জেনে গেলাম প্যাটার্ন কাকে বলে বা প্যাটার্নের গুরত্ব কতটুকু।  আলোচ্য পোষ্টে আমরা গার্মেন্টস প্যাটার্ন বিষয়ে আরোও প্রয়োজনিয় কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব,- যেমন গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার, কিভাবে তৈরি হয়, প্যাটার্ন তৈরি করতে কি কি লাগে ইত্যাদি।

তাহলে, চলুন শুরু করা যাক।

গার্মেন্টস প্যাটার্ন কাকে বলে?

গার্মেন্টস প্যাটার্ন কাকে বলে- এর উত্তর দেওয়ার আগে চলুন প্রথমে জেনে নেই প্যাটার্ন কাকে বলে? প্যাটার্ন হল কোন জিনিসের ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিচিত্র বা টেমপ্লেট যা কোন কিছু সজ্জিতকরণের উদ্দেশ্যে তার প্রতিচ্ছবি বার বার ব্যবহার করা হয়।

আর গার্মেন্টস প্যাটার্ন হল কাগজের হার্ড কপি যার উপর গার্মেন্টস পণ্যের মাপ অনুযায়ি এর বিভিন্ন অংশের নকসা বা স্টাইল আঁকা হয়।

 

 

ফ্যাশন ডিজাইনের দৃষ্টিকোন থেকে আরোও পরিস্কারভাবে বলতে গেলে, প্যাটার্ন হল একটি আসল পোশাক যা থেকে একই স্টাইলে অন্যান্য পোশাক নকল করে তৈরি করা হয়, বা প্যাটার্ন হতে পারে কাগজের কোন টেমপ্লেট যেখান থেকে কাংখিত পোশাকের অংশগুলি কাপড়ের উপর অংকন করা হয়। তারপর তা কেটে সেলাই করে বাজারজাত করা হয়।

 প্যাটার্ন মেকিং কি?

প্যাটার্ন making হল আপনার গার্মেন্টস পোশাকের ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিচ্ছবি তৈরি করার পদ্ধতি। তৈরিকৃত প্যাটার্ন একটি টেমপ্লেট হিসাবে ব্যবহার করা হয় যাতে বায়ারের কাংখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ি সঠিকভাবে কাপড় কাটা যায়।

প্যাটার্ন মেকিং এক প্রকার আর্টস যার মাধ্যমে কাগজের উপর সমতল আকারের প্যাটার্ন দিয়ে এমনভাবে পোশাক তৈরি করা হয় যা পরিধানের পর শরিরের অসমতল বা বক্র অংশেও ফিটিং হয়।

অন্যভাবে বলা যায়, প্যাটার্ন মেকিং হচ্ছে এমন এক কাজ যা পোশাকের কল্পিত ডিজাইন এবং বাস্তব উৎপাদনের মাঝে একটি সেতু বন্ধন তৈরি করে। যেখানে ডিজাইনের স্কেচটিকে পোশাকে পরিণত করা হয়।

এটি কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের উপর নির্ভশীল, যেমন-

  • ফেব্রিক বা কাপড়ের ধরণ
  • যে পরিধান করবে তার শরিরের মাপ
  • পোশাক সাজানোর কাজে যে সব ট্রিমস ব্যবহৃত হয়

প্যাটার্ন যেহেতু হার্ড কপির মত মোটা কাগজে তৈরি করা হয় এর এটি দ্বি-মাত্রিক আকারের হয় যা ব্যবহার করে তৈরি পোশাকটি ত্রি-মাত্রিক শরিরে পরিধান করা হয়।

প্যাটার্ন তৈরির কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে আপনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন সেটা মুল বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে, প্যাটার্ন তৈরির প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয় যখন একজন ডিজাইনার সর্বপ্রথম পোশাকের ছবির কোন sketch বা নকসা তৈরি করে যার মত করে তারা বাস্তব কোন পোশাক তৈরি করবে। ডিজাইনার যখন তার মনের মাধুরি মিশিয়ে এমন কোন ডিজাইনের sketch তৈরি করে তারপর আরোও কয়েকটি ধাপ অতিক্রমের মাধ্যমে কল্পিত নকসাকে বাস্তব পোশাকে ফুটিয়ে তোলা যায়। যা পরিধানের জন্য মানুষের শরিরের সাথে মিলে যায় বা ফিট হয়ে যায়।

প্যাটার্ন তৈরিতে কি কি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়?

প্যাটার্ন তৈরির সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল ড্রেপিং এবং ফ্লাট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিদ্বয়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ড্রেপিং সাধারণত: ম্যানুয়ালি বা হাতে-কলমে কাপড়কে dress form এর উপর জড়িয়ে করা হয় যাতে এর ডিজাইন আপনার পছন্দমত হয়।

যাহোক, এর জন্য নিচের যন্ত্র ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হবে-

  • Dress form
  • ফেব্রিক
  • পিন
  • প্যাটার্ন পেপার
  • French curve
  • একটি সোজ রুলার

প্রথমে কাপড় ড্রেস ফর্মে উপর আপনি যেভাবে চান সেভাবে জজিয়ে নিন। তারপর পিনের সাহায্যে আটকিয়ে মার্ক করুন। পরিশেষে ড্রেস ফর্ম থেকে কাপড়টি উঠিয়ে নিয়ে মার্ক অনুযায়ি কেটে নিয়ে কাপড়টির বিভিন্ন অংশের মাপ অনুযায়ি পেপার বোর্ডের উপর প্যাটার্ন তৈরি করুন। এই প্যাটার্নের সাথে seam allowance ও notches যোগ করে নিতে হবে।

অপরদিকে, ফ্লাট প্যাটার্ন তৈরি করা হয় সমতল ভূমির উপর। ফ্লাট প্যাটার্ন তৈরির জন্য নিম্নলিখিত সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হয়-

  • প্যাটার্ন পেপার
  • ফ্রেন্স কার্ভ
  • সোজা রুলার
  • পেন্সিল

ডিজিটাল ফ্লাট প্যাটার্ন CAD সফটওয়ার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।

প্যাটার্ন তৈরির সময় শরিরের মাপ কিভাবে নির্নয় করা হয় তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

  গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার?

বানিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য পেশাজীবিগন বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরি করে থাকে। বাস্তবিক অর্থে বর্তমান সময়ে প্যাটার্ন তৈরির জন্য কম্পিউটার সফ্টওয়ারের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

যাহোক, প্যাটার্ন তৈরির উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার হতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হল-

  • ড্রাফ্টিং বা drafting:

এই পদ্ধতিতে পোশাকের আকার বা সাইজ নির্ধারণের জন্য বিদ্যমান কোন পোশাক, body form বা মানুষের শরির থেকে মাপ নেওয়া হয়। শরিরের মাপ বলতে বক্ষদেশ, কোমর, উরু বা হিপ ইত্যাদি জায়গার মাপ নিতে হয়। তারপর পরিধানের পর যাতে সহজভাবে ব্যবহার করা যায় এর জন্য শরিরের মাপ থেকে কিছু পরিমান ঢোলা রেখে প্যাটার্ন কাগজের উপর লাইন টেনে মার্ক করা হয়। এভাবে এই ধরণের প্যাটার্ন তৈরি করা হয়।

  • ড্রেপিং বা draping

আমরা জানি, যার দৈর্ঘ ও প্রস্থ থাকে তাকে বলা হয় দ্বি-মাত্রিক বা two dimensoal কোন বস্তু। অপরদিকে, যার দৈর্ঘ ও প্রস্থের সাথে উচ্চতাও থাকে তাকে বলা হয় ত্রি-মাত্রিক বস্তু। সে আলোকে কাপড় হল দ্বি-মাত্রিক এবং আমাদের শরির হল ত্রি-মাত্রিক।

এখন কাপড় দিয়ে পোশাক বানানোর সময় ত্রি-মাত্রিক শরিরের কথা বিবেচনায় রাখা হয়। পোশাকটি আমাদের শরিরের সাথে তখনই মিলে যাবে যখন তৈরি পোশাকটি ত্রি-মাত্রিক আকারের হবে।

 

 

এবার, প্যাটার্ন তৈরির ড্রেপিং পদ্ধতি হচ্ছে প্রথমে দ্বি-মাত্রিক কাপড়কে কোন শারিরিক আকারের সাথে মিল রেখে যথাযথভাবে মাপ নিয়ে কাপড়টি ত্রি-মাত্রিক আকার দিতে হয়। তারপর, কাপড়ের সেই আকৃতি কাগজের উপর রেখে তার মাপ অনুযায়ি কাগজটি অংকন করে এই প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। পরিশেষে, এই প্যাটার্ন অনুযায়ি কাপড় কেটে সেলাই করে পোশাক প্রস্তুত করা হয়।

ড্রেপিং পদ্ধতি কিছুটা ব্যায় এবং সময় সাপেক্ষ হতে পারে।

  • ফ্লাট প্যাটার্ন

এই পদ্ধতি হল শরিরের সাথে ভালভাবে ফিট হয় এমন ধরণের এক বেসিক প্যাটার্ন যার মধ্যে comfort ease অন্তর্ভুক্ত থাকবে। Comfort ease যোগ করে পোশক তৈরি করলে এটি সহজে আরামদায়ক অনুভূতির সাথে পরিধান করা যায়। কারণ comfort ease হল পোশাক তৈরির সময় শরিরের exact মাপ এর চেয়ে কিছু পরিমান বেশি নেওয়া। যাতে কাপড়টি একেবারে আটশাঁট হয়ে শরিরের সাথে লেগে না থাকে।

ফ্লাট প্যাটার্নের শুরুতেই একজন ডিজাইনারের যা প্রয়োজন হয় হা হল শরিরের মাপ অনুযায়ি পোশাকটির জন্য sloper বা প্যাটার্ন ব্লক তৈরি করা। Final sloper সাধারণত: কার্ডবোর্ড বা পেপারবোর্ডের উপর তৈরি করা হয় যা ব্যবহার করে নেকলাইন, হাতার সাইজ, দৈর্ঘ ইত্যাদি পরিবর্তন করে অগনিত পোশাকের স্টাইল তৈরি করা যায়।

পোশাক তৈরির সময় এই প্যাটার্নে পাঁচটি টুকরার প্রয়োজন হয়:

  • শরিরের সামনের অংশ বা front bodice
  • শরিরের পিছনের অংশ বা back bodice
  • গলার মাপ বা neckline
  • হাতার মাপ বা sleeve
  • Fitted skirt

উপরের এই প্রত্যেক উপাদান অনুযায়ি কাপড় কাটর পর তা একসাথে মিলিয়ে সেলাই করে পোশাক তৈরি করা হয়।

বর্তমান বিশ্বে কিভাবে প্যাটার্ন তৈরি করা হয়?

আজকের দিনে কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে মার্কেটে বিভিন্ন সফটওয়ার চলে এসেছে যার ব্যাবহার শিখে নিয়ে বায়ারের চাহিদামত আপনিও খুব সহজে কাংখিত কোন প্যাটার্ন তৈরি করে নিতে পারেন। এমন কয়েকটি সফটওয়ারের নাম হল-

  • Gerba
  • Lectra
  • Tukatech
  • Optitex etc.

এই সফটওয়ারগুলো আপনার কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরিতে সময় এবং পয়সা উভয়ই কম লাগে। প্যাটার্ন তৈরির এই সফটওয়ারে আপনি পোশাকের মাপের বিভিন্ন ভেল্যু খুব সহজেই বসিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে যা দিয়ে আপনি প্যাটার্নের একটি খসরা তৈরি করে নিতে পারেন।

আপনি সফটওয়ারগুলো দিয়ে ত্রি-মাত্রিক আকারে প্যাটার্ন তৈরি করতে পারবেন। যার সমস্ত measurements আপনি 3D body scanner থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার বিষয়টি নিয়ে শুরু করছি আজকের এই পোষ্ট। এর সাথে তৈরি পোশাক পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কিভাবে করা হয় তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

কোয়ালিটি বিষয়টি সাধারণত: পন্য বা সেবার ক্ষেত্রে বেশি শুনা যায়। বিশেষ করে নতুন ব্র্যান্ডের কোন জিনিস বাজারে ছাড়া হলে, ক্রেতা সাধারণ প্রথমে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে এই ভেবে যে না জানি এর মান কেমন হয়!

এছাড়া, যারা গার্মেন্টস পন্য রপ্তানির সাথে জড়িত তাদের জন্যও পোষ্টটি খুব গুরত্বপূর্ণ। কেননা, এক্ষেত্রে বিদেশী বয়ারদের সাথে কাজ করে পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করে তা সরবরাহ করতে হয়। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে কোয়ালিটি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নেয়া প্রয়োজন।

কোয়ালিটি কি বা কোয়ালিটি কাকে বলে?

কোয়ালিটি এর অর্থ হল কাস্টোমার যাতে আপনার পণ্য ব্যবহার করে সন্তুষ্ট থাকে।

আরোও সহজে যদি বলি-  উৎপাদিত পণ্য বা সেবা কাস্টোমারের চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়েছে কিনা বা এক কথায় এটি ব্যবহার উপযোগী কিনা – তা যাচাই করা হয়।

 

মানুষের ক্ষেত্রে যদি ধরি, তাহলে কোয়ালিটি বলতে বুঝায় তার সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট বা গুনাবলি। যেমন, আব্দুর রহিমের ভিতর যদি সততা থেকে থাকে, তাহলে আমরা বলতে পারি, আব্দুর রহিম একজন সৎ লোক বা তার সবচেয়ে ভাল কোয়ালিটি হল, সে একজন সৎ লোক।

 

ব্যবসা বিশেষ করে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি পরিমাপ করা হয় উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান কেমন বা অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যের তুলনায় এর শ্রেষ্ঠত্বের মাত্র কতটুকু। এই জায়গায়, আর একটি জিনিস চলে আসে, তা হল পণ্যটিতে কোন প্রকার ত্রুটি আছে কিনা বা এটি ত্রুটি মুক্ত কিনা।

ISO ৮৪০২-১৯৮৬ মানদন্ড অনুযায়ি, কোয়ালাটি কাকে বলে তা নিম্নরুপভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

সার্বিকভাবে কোন পণ্যে বা সেবার বৈশিষ্টগত সমষ্টি যা কাস্টোমারের চাহিদা বা প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়। ISO দ্বারা বুঝানো হয়, আন্তর্জাতিক মানদন্ড বিষয়ক সংস্থা যা কোন প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণে কাজ করে।

পণ্যের কোয়ালিটি সাধারণত: ভোক্তা সাধারণ বা গ্রাহকগন তাদের অতীত ধারণা লব্ধ জ্ঞান থেকে বিচার করে থাকে। যদিও কাস্টমারের মতামতই পণ্যের কোয়ালিটি বিষয়ে চুড়ান্ত কোন বিষয় নয়। কেননা, গ্রাহক কোন পণ্যের প্রোকৌশলগত খুটিনাটি বিষয়ে পরিমাপ করার মত যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না। কাস্টোমারের সন্তুষ্টি হল পণ্যের গুনগত মান বা কোয়ালিটির পরবর্তি ফলাফল।

 

বছরে পর বছর ধরে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি উন্নত করার এবং তা বজায় রাখার কোন পথ অবলম্বন করে চলতে হয় যাতে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদিত পণ্য বা সেবা কাস্টমার কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হয় বা গ্রাহকের চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়। তা না হলে কাস্টমারের থেকে প্রত্যাখ্যান হওয়ার আশংকা থাকবে।

 

আরোও দেখুন কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাকে বলে, কেন প্রয়োজন ও কিভাবে করা হয়।

বর্তমান মানুষের কোয়ালিটি যাচাই করা বিভিন্ন রকমে সুযোগ রয়েছে। কোয়ালিটি বিষয়ে নিচের তথ্যগুলিও বিবেচনায় ধরা হয়-

  • সমজাতিয় কোন পণ্যের শ্রেষ্ঠত্বের মাত্রা বিচার করা হয়।
  • স্পেসিফিকেশনের পন্যটি কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ তা দেখা হয়।
  • পণ্যের বৈশিষ্টগত সমষ্টি যা কাস্টোমারের চাহিদ মেটাতে সক্ষম কিনা।
  • পণ্য বা সেবাটি ব্যবহার উপযোগি কিনা।
  • এর মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি আছে কিনা।
  • কাস্টোমার পণ্যটি ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হবে কিনা।

পন্য বা সেবার গুনগত মান নির্ধারণে উপরের বিষয়গুলি গুরত্বের সাথে বিচার করা হয়।

তাই কোয়ালিটির নূন্যতম স্ট্যান্ডার্ড পূরণের জন্য আপনাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

কারণ, আপনি যদি কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড পর্যাপ্তভাবে পূরণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে।

গার্মেন্টস কোয়ালিটি বলতে কি বুঝায়?

গার্মেন্টস শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই যখন আপনি নির্ধারিত পোশাকটির জন্য সমস্ত কাঁচামাল সংগ্রহ করবেন। যেমন, পোশাকের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাঁচামাল হল তার জন্য উপযুক্ত ফেব্রিক বা কাপড় নির্বাচন করা।

এরপর পোশাকের অন্যান্য উপকরণের কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য করতে হবে। সমস্ত কাঁচামাল নির্বাচনের সময় তার উৎস খুব ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে যেন তা মানসম্পন্ন হয়।

গার্মেন্টস পণ্যের গুনগত মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  নির্ভর করে তার ফেব্রিকের গুনগত মানের উপর। যেমন, কি জাতীয় ফাইবার বা ইয়ার্ন দিয়ে ফেব্রিক তৈরি করা হয়েছে, এর রঙের স্থায়িত্ব কেমন, ফেব্রিকের উপরিভাগের ডিজাইন কেমন এবং সবশেষে উৎপাদিত পোশাক পণ্যের উপর।

 

তবে, রপ্তানির ক্ষেত্রে বায়ার প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন সামনে রেখেই আপনাকে পোশাক তৈরির সব ধাপ সম্পন্ন করতে হবে।

 

এছাড়া, গার্মেন্টস পণ্যে কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণে আর একটি গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল। এর দ্বারা বুঝানো হয়- পণ্যটি তার স্পেসিফিকেশন মোতাবেক তৈরির সময় কোয়ালিটির আদর্শ মানদন্ডের সমস্ত শর্ত পূরণ করা হয়েছে।

যাতে কাস্টোমারের সন্তুষ্টি অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

আর একটি বিষয় হলো – কোয়ালিটি নিশ্চিতে আপনার হাতে কাস্টোমারের পছন্দ অপছন্দের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যে তারা কি ধরণের পোশাক পরিধান করতে চায়, তার ডিজাইন কেমন হবে, স্পেসিফিকেশন কি এবং কিভাবে উৎপাদন করা যাবে – ইত্যাদি।

বিশেষ করে,  নতুন প্রোডাক্টস তৈরির সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদিত পোশাকের কোয়ালিটির বেশ কিছু প্যারামিটার থাকে। যেমন, এটি পরিধানে আরামদায়ক হবে কিনা, এর টেকসই কেমন হবে, রঙ উঠতে পারে কিনা, এর ডিজাইন কেমন – ইত্যাদি।

তবে, এর সাথে পণ্যটির দামের বিষয়টিও বিবেচনায়া রাখতে হবে। খুব ভালো করতে গিয়ে তা যেন নাগালের বাইরে না চলে যায়। পাশাপাশি দাম বেশী কমাতে গিয়ে আপনার প্রোফিট মার্জিনের উপর যেন প্রভাব না পরে।

পোশাক জাতীয় পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য আপনাকে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়েও কাজ করতে হবে।

গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার?

গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার হতে পারে – তা নিচে উল্লেখ করছি।

পণ্যের কোয়ালিটি তিন প্রকার হতে পারে-

  • Quality of design: মানে হল, পণ্যটি দেখতে কেমন। যে কোন পণ্য প্রস্তুতের পর প্রথমে তার appearance বিবেচনায় আনা হয়। এর ভেতরগত মান যত ভাল হোক না কেন, এর ডিজাইন দেখতে যদি চোখে না ধরে তাহলে তার কাস্টমারের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়না। তাই ইহা অনেক সময় quality of design নামেও পরিচিত। এই ধরণের কোয়ালিটি নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাঝে মাঝে ক্রেতাদের চাহিদা ও মতামত সংগ্রহ করা হয় এবং সে অনুযায়ি পণ্যের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়।
  • Quality of fitness: এর দ্বারা বুঝায় পণ্যটির ব্যবহার উপযোগি হয়েছে কিনা। স্পেসিকেশন অনুযায়ি উৎপাদিত পণ্য কাস্টারের চাহিদার সাথে মিলেছে কিনা।
  • Quality of performance: উৎপাদিত পণ্যের কার্যকারিতার গুনগত মান কেমন তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।

ইনস্পেকশন এর উপর ভিত্তি করেও গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার তা নির্ধারণ করা যায়। উৎপাদন প্র্রক্রিয়ার এক একটি ধাপের সাথে তা সম্পর্কযুক্ত। নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে-

১) উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে পরীক্ষা:

পণ্য উৎপাদন শুরু করার পূর্বে বায়ারের পরামর্শ নিতে হয় এই অর্থে যে, কোন ধরণের কাঁচামাল ব্যবহার করা হবে। ফ্যাক্টরি অনেকসময় বেশি লাভের আশঅয় উৎপাদন খরচ কমিয়ে নিম্ন মানের কাঁচামাল ক্রয় করতে পারে যা বায়ারের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।

এই ইনস্পেকশন প্রক্রিয়ায় আবার কোন কোন সময় উৎপাদন পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপসমুহু পরীক্ষা করে দেখা হয়।

২) পণ্য উৎপাদনের সময় কোয়ালিটি পরীক্ষা:

এর মাধ্যমে বায়ার পণ্যে গড় মান কেমন হতে পারে সে বিষয়ে সার্বিকভাবে এক ধরণের ধারণা পেয়ে থাকে। যা উৎপাদন চক্রের প্রথম থেকেই দেখা হয়। এটি আমদানিকারকের জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

যখন কোন উৎপাদিত পণ্যের ফিনিশড প্রোডাক্টস প্রোডাকশন লাইন থেকে বের হওয়া শুরু হয় তখন তখনই সেখান থেকে কয়েকটি উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান ভালভাবে যাচাই বাচাই করা হয়। যদি কোন সমস্য বা ভূল ত্রুটি ধরা পরে তখন তার ফ্যাক্টরি কর্তপক্ষকে জানানো হয় যাতে যথাযথ সংশোধন করে অবশিষ্ট পণ্যগুলো তৈরি করা যায়।

৩) দৈবচয়নের মাধ্যমে পণ্যের চুড়ান্ত পরীক্ষা:

এটিকে সাধারণত: প্রাক জাহাজিকরণ পরীক্ষা বলা হয় ইংরেজিতে যা pre shipment inspection নামে পরিচিত। ইহা সবচেয়ে কমন একটি পরীক্ষা যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। ইহা তখনই করা হয় যখন ১০০% উৎপাদন সম্পন্ন হয় এবং যার কমপক্ষে ৮০% উৎপাদিত পণ্যের প্যাকেটিং কাজ শেষ হয়ে যায়। কাজেই, এটি দৈবচয়নের মাধ্যমে বাস্তবিক অর্থে করা কোন পরীক্ষা যেখানে সরবরাহকারি কোন প্রকার খেলা খেলতে পারে না।

এই পরীক্ষা বায়ারকে ক্ষমতা প্রদান করে সরবরাহকরিকে চাপে ফেলার জন্য যাতে পণ্যের গুনগত মানে কোন প্রকার হের ফের করা সুযোগ না পায়। পণ্য জাহাজিকরন নিশ্চিত করাই হল এর উদ্দেশ্য।

৪) কনটেইনারে লোড করার সময় পরীক্ষা:

ইহা পণ্য উৎপাদন শুরুর পূর্বের পরীক্ষার মত যা কদাচিত করা হয়। ইহা তখনই করা হয় যখন বায়ারের কোন নির্দিষ্ট লোডিং পরিকল্পনা থাকে।

বন্ধুগন, কোয়ালিটি কত প্রকার – বিষয়ে উপরের আলোচনায় কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, ধন্যবাাদ।

গার্মেন্টস পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ বলতে কি বুঝায়?

গার্মেন্টস পোশাক পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক থোকে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়টি যেহেতু পণ্যের ত্রুটি বা ডিফেক্টের সাথে সম্পর্কিত তাই এখানে উৎপাদিত পণ্যের কোন সমস্যা রয়েছে কিনা তা দেখার বিষয়।

নিচে কয়েকটি সমস্যার নাম উল্লেখ করা হল-

১. ফেব্রিক ডিফেক্ট:

পোশাক উৎপাদনের সময় ফেব্রিক বা কাপড়ের বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেমন crease mark, knots, ইত্যাদি। এছাড়া, কাপড় ডাইং বা প্রিন্টিং এর সময়েও ডিফেক্ট তৈরি হতে পারে।

২. সেলাইয়ে ডিফেক্ট:

কাপড় কাটার পর যখন সেলাই করা হয় তখনও বেশ কিছু ডিফেক্ট তৈরি হতে পারে, যেমন সেলাই বাদ পরে যাওয়া, অসম সেলাই, open seam, seam puckering ইত্যাদি।

৩. কালার ডিফেক্ট:

এক্ষেত্রে অনুমোদিত নমুনার সাথে উৎপাদিত পোশাকের রঙে তারতম্য দেখা দিতে পারে। এজন্য, যদি কালার কম্বিনেশন সঠিক না হয় তখন এটি দেখা দিতে পারে। আবার কাপড়ের রঙের সাথে যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হবে তার রঙ যদি একই রকম না থাকে, তখনও এ ধরণের ত্রুটি তৈরি হয়।

৪. সাইজের ডিফেক্ট:

বায়ার পদত্ত স্পেসিফিকেশনের সাইজের সাথে তৈরি পোশাকের সাইজ যদি না মিলে, তখন এ ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।

৫. অন্যান্য সমস্যা:

অন্যান্য ত্রুটির মধ্যে যেমন বাটন, হোল, জিপার, সেলাই সুতা ঝুলে থাকা, বাটন বাদ পরে যাওয়া, জিপার খাটো হওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

গার্মেন্টস পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করা হয়?

আগেই বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ শুরু এর কাঁচামাল সংগ্রহের ধাপ থেকে। কাজেই, এই ক্ষেত্রে, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের কাজটি শুরু হবে পোশাকের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে এবং শেষ হবে যখন পোশাকটি সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত হয়ে যাবে তখন।

কোন কোন জায়গায় কোয়ালিটি চেক করা হয়ে তা নিচে এক এক করে উল্লেখ করা হল-

পোশাকের কাঁচামাল ইনস্পেকশন

আপনার গোডাউনে যখন পোশাক তৈরির কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামাল চলে আসবে, তখন খুব ভাল করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সেখানে কোন প্রকার ত্রুটি বা ডিফেক্ট রয়েছে কিনা। আপনাকে কাপড়ের কমপক্ষে ১০% পরীক্ষা করতে হবে। কাপড়ের পাশাপাশি কাঁচামাল যেমন, লেস, বাটন, জিপার ইত্যাদি প্রয়োজন হলে অনুমোদিত মানদন্ড অনুসারে ল্যবরেটরিতে পরীক্ষা করা যেতে পারে। এগুলো পরীক্ষা করার বেশ কিছু প্যারামিটার থাকে যেমন, ফেব্রিকের বুনন কাজ, GSM ( প্রতি স্কয়ার মিটারে কত গ্রাম ), থ্রেড কাউন্ট, ইয়ার্ন কাউন্ট, ছিড়ে ফেলার শক্তি, গঠন, হাতে ধরার অনুভূতি, কালার ফাস্টনেস ইত্যাদি।

প্রক্রিয়াকালিন কোয়ালিটি কন্ট্রোল

পোশাক ‍উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে কিছু ক্রিটিকাল পয়েন্ট থাকে যে পয়েন্টগুলোতে পোশাক সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে হয়। যেমন, কাপড় কাটার সময় দেখতে হবে স্পেসিফিকেশনের সাথে মিলছে কিনা, ঠিকমত সেলাই কাজ চলছে কিনা, সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুতার রঙ আর কাপড়ের রঙের মধ্যে লক্ষণিয় পর্যায়ে তারতম্য আছে কিনা ইত্যাদি। তারপর, ফিনিশিং কাজ ঠিক মত হচ্ছে কিনা – এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।

কাপড় কাটার সময় দু’টি জিনিস খেয়াল রাখতে হয়- এক হল কাপড় কাটার জন্য টেবিলের উপর ছড়িয়ে দেওয়া ও দুই- কাপড় কাটার পর। এই দুই সময়ে কাপড়ে কোন ডিফেক্ট থাকলে তা সহজেই ধরা পরে।

সেলাইয়ের সময়ও কয়েকটি বিষয়ে গুরত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যেমন সেলাই সোজা লাইন বরাবর চলে কিনা, সেলাইয়ের পর কাপড়ে কোন টান লেগে থাকে কিনা, প্রতি ইঞ্চিতে স্টিচের সংখ্যা, মেশিনের নিডল কেমন, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়।

ফিনিশিং সেকশনের কোয়ালিটি কন্ট্রোল

তৈরি পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফিনিশিং শাখার গুরত্ব অনেক। কারণ এখান থেকে প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা হয়। এজন্য, কোন প্রকার ডিফেক্ট রয়েছে কিনা তা পুনর্বার ভাল করে দেখতে হবে। যেমন, সেলাইগত ডিফেক্ট, ডিজাইন, পরিমাপ সঠিক কিনা – এই সব বিষয়।

ফাইনাল প্রোডাক্টের চুড়ান্ত পরীক্ষা

পোশাক উৎপাদনের সকল ধাপ সমাপ্তির পর লট থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু নমুনা সংগ্রহ করতে হবে এবং অুনমোদিত নমুনার সাথে পুরোপুরিভাবে মিলে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক প্যারামিটার থাকে যার উপর ভিত্তি করে এই পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

মানের গ্রহনযোগ্য মাত্রা বা acceptable quality level(AQL)

তৈরি করা পোশাকের সম্পূর্ণ লট প্যাকেটজাত করার পর, কোয়ালিটি ম্যানেজার AQL এর উপর ভিত্তি করে একটি অডিট করে। এই অডিট রেজাল্টের উপর কোয়ালিটি ম্যানেজার যদি সন্তুষ্ট হয়, তখন চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য বায়ারের নিকট পাঠানো হবে। র‌্যানডম স্যামপ্লিং এর মাধ্যমে AQL নির্নয়ের পর বায়ার উক্ত লটের পোশাক হয় গ্রহণ করবে বা রিজেক্ট করবে। নমুনা পরীক্ষার পর ডিফেক্টের হার যদি AQL সীমার মধ্যে থাকে, তাহলে তা গৃহিত হবে, অন্যথায় পরিত্যাগ করা হবে।

কোয়ালিটি পলিসি কাকে বলে?

কোয়ালিটি পলিসি হলো একটি স্বীকৃত কোয়ালিটি মেনেজমেন্ট সিস্টেমের (QMS) প্রয়োজনীয় উপাদান যেখানে আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক স্টেকহোল্ডারদের জন্য QMS এর কার্য পরিধির বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণ করা হয়।

আরোও সহজ ভাষায় বলতে গেলে – এটি আদর্শিকভাবে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি যা কোন সংস্থার উদ্দেশ্য, মিশন এবং কৌশলগত কর্মকান্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

ইহাতে এমন একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা থাকে যার মাধ্যমে কম্পানির উৎপাদিত পণ্য ও সেবার গুনগত মান অর্জনের উদ্দেশ্য পূরণ হয় এবং কোয়ালিটির উপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অরগানাইজেশনের প্রদত্ত শর্ত পূরণেও তা অঙ্গিকারবদ্ধ থাকে।

যেমন, ISO 9001 এর জন্য একটি কোয়ালিটি পলিসি থাকতে হয় এবং এর পরিমাপযোগ্য সব উদ্দেশ্যগুলো কম্পানির সমস্ত স্টাফদের নিকট বোধগম্য ও অনুসরণীয় হতে হয়।

কম্পানি স্টাফদের এটিও জানতে হয় যে, তারা যে কাজ করে তা কিভাবে করলে কম্পানির কোয়ালিটি পলিসির সাথে মিলে যাবে, সাংঘর্ষিক হবে না।

এজন্য, অডিটরগন সংস্থার কোয়ালিটি পলিসি এবং এর উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হচ্ছে শুধুমাত্র সেদিকেই নজর দিবেনা, এর সাথে সাথে কম্পানির স্টাফ এ বিষয়ে কতটুকু সচেতন তাও পরীক্ষা করে দেখবে।

অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার কোয়ালিটি পলিসি তাদের মুল ভবনে সকলের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে এবং কম্পানি ওয়েবসাইটে প্রদান করে থাকে।

গার্মেন্টস কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা Garments QC – বিষয়টির উপর কিছু তথ্য নিয়ে পুনরায় চলে এলাম আপনাদের মাঝে। আলোচ্য পোষ্টে মুলত, তৈরি পোশাক পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাজটি কিভাবে করা হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

পোষ্টের শুরু কোয়ালিটির উপর কিছু প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে। কোয়ালিটি কাকে বলে, কত প্রকার – এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচেরে লিংকে ক্লিক করে ভিজিট করুন।

কোয়ালিটি এর অর্থ হল কাস্টোমার যাতে আপনার পণ্য ব্যবহার করে সন্তুষ্ট থাকে। আপনি যদি কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড পর্যাপ্তভাবে পূরণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াতে পারে। এই কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড পূরণের জন্য আপনাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

এজন্য আপনার হাতে কাস্টোমারের পছন্দ অপছন্দের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য থাকা প্রয়োজন যে তারা কি ধরণের পোশাক পরিধান করতে চায়, তার ডিজাইন কেমন হবে, স্পেসিফিকেশন কি এবং কিভাবে উৎপাদন করা যাবে – ইত্যাদি। বিশেষ করে,  নতুন প্রোডাক্টস তৈরির সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদিত পোশাকের কোয়ালিটি বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, এটি পরিধানে আরামদায়ক হবে কিনা, এর টেকসই কেমন হবে, রঙ উঠতে পারে কিনা, এর ডিজাইন কেমন – ইত্যাদি। তবে, কোয়ালিটি নিশ্চিতের সময় দামের বিষয়টিও বিবেচনায়া নিতে হবে, যেন তা নাগালের বাইরে চলে না যায়।

আমরা সহজে বুঝতে পারি যে, কোয়ালিটি যে কোন ব্যবসার সফলতার জন্য একটি মুল উপাদান। কাস্টোমার তার কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে খারাপ মানের কোন জিনিস ক্রয় করতে যাবেনা। হয়ত, ভূলবশত: একবার কি দুইবার, তার বেশি নয়। এক দুইবার কিনে ব্যবহারের পর যখন পণ্যের কোয়ালিটি সম্পর্কে জেনে যাবে বা কাস্টোমার যদি এটি ব্যবহার করে সন্তুষ্ট না হয়, পরবর্তিতে সে আর ঐ কম্পানির দিকে অগ্রসর হবে না। এটাই স্বাভাবিক। এর ফলে, কম্পানি তার ব্যবসা ধরে রাখতে পারবে না। তাই, কোয়ালিটি এটি অতীব গুরত্বপূর্ণ ইস্যু যার ব্যাপারে সকল উদ্যোক্তাকেই উপযুক্ত তৎপর হতে হবে।

পোশাক জাতীয় পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য আপনাকে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়েও কাজ করতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই যখন আপনি নির্ধারিত পোশাকটির জন্য সমস্ত কাঁচামাল সংগ্রহ করবেন। যেমন, পোশাকের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাঁচামাল হল তার জন্য উপযুক্ত ফেব্রিক বা কাপড় নির্বাচন করা। এরপর পোশাকের অন্যান্য উপকরণের কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য করতে হবে। সমস্ত কাঁচামাল নির্বাচনের সময় তার উৎস খুব ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে যেন তা মানসম্পন্ন হয়।

টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস পণ্যের মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  নির্ভর করে তার ফেব্রিকের গুনগত মানের উপর। যেমন, কি জাতীয় ফাইবার বা ইয়ার্ন দিয়ে ফেব্রিক তৈরি করা হয়েছে, এর রঙের স্থায়িত্ব কেমন, ফেব্রিকের উপরিভাগের ডিজাইন কেমন এবং সবশেষে উৎপাদিত পোশাক পণ্যের উপর।

তবে, রপ্তানির ক্ষেত্রে বায়ার প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন সামনে রেখে পোশাক তৈরির সব ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া, গার্মেন্টস শিল্পের আর একটি গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল। এর দ্বারা বুঝানো হয়- পণ্যটি তার স্পেসিফিকেশন মোতাবেক তৈরির সময় কোয়ালিটিরে আদর্শ মানদন্ডের সমস্ত শর্ত পূরণ করা হয়েছে। যার ফলে কাস্টোমারের সন্তুষ্টি অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এভাবে পোশাক উৎপাদনের সময় খরচের হিসাবটিও মাথায় রাখতে হবে যাতে প্রোফিট মার্জিনের উপর প্রভাব না পরে।